হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :

প্রত্যাবাসনের তালিকা হস্তান্তরের পরও আসছে রোহিঙ্গারা। রবিবার নতুন করে আরও ৭২টি পরিবারের ২৮৩ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু বাংলাদেশের টেকনাফের সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে। কোন ভাবেই বন্দ হচ্ছেনা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ।

এদিকে প্রত্যাবাসন শুরু করতে শুক্রবার ১৬ ফেব্রয়ারী দুপুরে ঢাকায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিয়াও সোয়ের নেতৃত্বে বৈঠক করা হয়। উক্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠকে ১ হাজার ৬৭৩ পরিবারের ৮ হাজার ৩২ জন মিয়ানমার নাগরিকের (রোহিঙ্গা) তালিকা মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপরও রাখাইন রাজ্য থেকে এখনও পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা।

বহিরাগমন বিভাগ ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু নোমান মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, উখিয়া ও টেকনাফে ১২টি আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ৬টি ক্যাম্পের মাধ্যমে রোহিঙ্গা নিবন্ধনের কাজ করেছে বহিরাগমন বিভাগ ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তত্তাবধানে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী, বিজিবি, আনসার ও ইউএনএইচসিআরের কর্মীরা। ১৪ ফেব্রæয়ারী পর্যন্ত মোট ১০ লাখ ৬৮ হাজার ২৩৬ জন রোহিঙ্গাকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত করে নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন তরান্বিত করতে শুক্রবার ১৬ ফেব্রæয়ারী দুপুরে সচিবালয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ৮ হাজার ৩২ জন মিয়ানমার নাগরিকের (রোহিঙ্গা) তালিকা মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারপরও টেকনাফ উপজেলার কোনো না কোনো সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে গোপনে ও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে রোহিঙ্গারা ঢুকছে বাংলাদেশে। রবিবার ১৮ ফেব্রæয়ারী নতুন করে এসেছে ৭২ পরিবারের মোট ২৮৩ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু। নাফ নদীতে বিজিবির সতর্ক অবস্থায় থাকায় রোহিঙ্গারা এখন নতুন পথে সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে’। তিনি আরও বলেন, ‘চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে ১৭ ফেব্রæয়ারী পর্যন্ত ৩৮৬টি পরিবারের মোট ১ হাজার ৭২৭ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু এসেছেন টেকনাফে। তাদের সবাইকে টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে পাঠানো হয়েছে’।

বাংলাদেশ সেনা বাহিনী টেকনাফের সাবরাং হারিয়াখালী ত্রাণকেন্দ্রে দায়িত্বরত জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি টেকনাফ সিনিয়র উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রবিবার ১৮ ফেব্রæয়ারী সকাল থেকে সন্ধা ৫টা পর্যন্ত নতুন করে এসেছে ৭২টি পরিবারের ২৮৩ জন রোহিঙ্গা। এই রোহিঙ্গাদের প্রথমে সেনাবাহিনীর হারিয়াখালী ত্রাণকেন্দ্রে নেওয়া হয়। এরপর মানবিক সহায়তা ও প্রতিটি পরিবারকে চাল, ডাল, সুজি, চিনি, তেল, লবণের একটি করে বস্তা দিয়ে গাড়ি যোগে টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানো হয়েছে। কোনো ভাবেই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যাচ্ছে না’।